শীতে বাত ও গোড়ালি ব্যথা
শীতে শরীরের বিভিন্ন রকম ব্যথা-বেদনা বাড়ে। বিভিন্ন বাত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়, যেমন- রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, অস্টিওআথ্রাইটিস, গাউট বা গেঁটে বাত ইত্যাদি।
রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস
দেখা যায় আক্রান্ত ব্যক্তির হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হয়, জয়েন্টগুলো ফুলে যায়, সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় খুব বেশি ব্যথা করে, তারপর একটু হাঁটাচলা ও কাজ করলে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে আসে।
অস্টিওআথ্রাইটিস
রোগীর হাত, পা ও মেরুদণ্ডের বড় বড় জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হয়, যেমন- হাঁটু, ঘাড়, কোমর, হিপ ও সোল্ডার জয়েন্ট ইত্যাদি। এক্ষেত্রে বিশ্রামে থাকলে ব্যথা কম থাকে কিন্তু কাজ বা হাঁটাচলা করলে ব্যথা বাড়ে। এক্ষেত্রে জয়েন্টের অভ্যন্তরে কারটিলেজগুলো ক্ষয় হতে থাকে ও জয়েন্টের ভেতরে যে সায়নোভিয়াল ফ্লুইড থাকে তা কমে যায়, যার ফলে রোগীর মুভমেন্ট করতে কষ্ট হয়।
গাউট বা গেঁটে বাত
এটা সাধারণত প্রথম আক্রমণ করে পায়ের বড় আঙ্গুলটিতে, আক্রান্ত আঙ্গুলটিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয় ও ফুলে যায়, পা ফেলতে অনেক কষ্ট হয় এবং পরে অন্য জয়েন্টগুলোতে ছড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রে রোগীর শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।
রোগ নির্ণয়
রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে, যেমন- আক্রান্ত জয়েন্টের এক্সরে ও কিছু প্যাথলজিক্যাল টেস্ট যেমন- আর এ টেস্ট, সেরাম ইউরিক এসিড, সিআরপি, এন্টি-সিসিপি, সেরাম ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।
চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর ইতিহাস, রোগীর লক্ষণ বা উপসর্গ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে। তাই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
গোড়ালির ব্যথা
রহিমা খাতুন, বয়স ৩৭ বছর। ইদানীং ঘুম থেকে উঠে ফ্লোরে পা রাখতেই পায়ের তলায় তীব্র ব্যথা হয়। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর উঠে দাঁড়াতেই পায়ের তলায় তীব্র ব্যথা হয়। খানিক একটু হাঁটাহাঁটি করলে ব্যথা কিছুটা কমে আসে। এরকমভাবে কিছুক্ষণ বসে থাকলে উঠে প্রথমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়, তারপর আস্তে আস্তে ব্যথা কমে আসে। প্রথমদিকে এতটা গুরুত্ব না দিলেও পরবর্তীতে ব্যথার মাত্রা এত বেড়ে গেল যে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন, চিকিৎসক আশ্বস্ত করে বললেন, এটি সাধারণত দুটি কারণে হয়ে থাকে, প্রথমত- প্লান্টার ফ্যাসাইটিস, দ্বিতীয়ত- ক্যালকেনিয়াম স্পার। এটি নির্ণয় করার জন্য একটি এক্সরে করতে বললেন। এক্সরে রিপোর্টে দেখা গেল পায়ের গোড়ালির প্রধান হাড়, যাকে মেডিকেল ভাষায় ক্যালকেনিয়াম বলে।
ক্যালকেনিয়াম হাড়ের নিচের দিকে ছোট হুকের হাড় বৃদ্ধি পেয়েছে, যাকে মেডিকেল পরিভাষায় ক্যালকেনিয়াম স্পার বলে। এর জন্য ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়, যেমন-
* সবসময় নরম জুতা ব্যবহার করতে হবে।
* হাঁটাচলার সময় হিল কুশন ব্যবহার করবেন।
* শক্ত স্থানে খুব বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না বা শক্ত স্থানে বেশি হাঁটাচলা করাও উচিত না। * ভারী কোনো জিনিস বহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন- বেশি ওজনের বাজারের থলি, পানিভর্তি বালতি ইত্যাদি বহন করা যাবে না।
* সিঁড়ি দিয়ে উঠা-নামা করার সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে হাতে সাপোর্ট দিয়ে ধীরে ধীরে উঠবেন ও নামবেন এবং যথাসম্ভব গোড়ালির ব্যবহার কম করবেন।
* ব্যথা থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের ব্যায়াম করা যাবে না।
* হাই হিল জুতা পরা সম্পূর্ণ নিষেধ।
* মোটা ব্যক্তিদের ওজন কমাতে হবে এবং সবসময় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ডা. এম ইয়াছিন আলী
লেখক : বাত, ব্যথা, পারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট,
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা।
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১০:১৫:৫২; দৈনিক যুগান্তর