তলপেটে যখন তীব্র ব্যথা

তলপেটে যখন তীব্র ব্যথা

জীবনে কখনো তলপেটের ব্যথায় ভোগেননি, এমন নারী বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। মাসিকের সময় কম-বেশি ব্যথা বা অস্বস্তি হতেই পারে, বিশেষত কিশোরীদের। তবে অন্যান্য কারণেও শরীরের এই অংশে ব্যথা হতে পারে।
মাসিকের কারণে তলপেটে যে ব্যথা হয়, তা পিঠের নিচের দিকে এবং ঊরুতেও ছড়াতে পারে। সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার এক দিন আগে কিংবা শুরুর দিনে এ ব্যথা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা দরকার নেই। তবে ব্যথা অস্বাভাবিক তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অনেক সময় জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের অসুখের কারণে এমন তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। তখন আরও কিছু উপসর্গ যোগ হতে পারে, যেমনÑস্বাভাবিক ব্যথার ধরনে পরিবর্তন, হঠাৎ কোনো মাসে তীব্র ব্যথা বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দিন ধরে ব্যথা, মাসিকের বেশ কিছুদিন আগে থেকে ব্যথা এবং মাসিকের প্রায় পুরো সময়ে, অনিয়মিত মাসিক, মাসিকের সময় ছাড়াও অন্য সময়ে তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি।

এ ছাড়া নিয়মিত ডিম্বপাতের সময়ে তলপেটের যেকোনো একপাশে কিছুটা ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। এ সময়টা হলো সাধারণ হিসাবে পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগের দিনটি। প্রস্রাবে সংক্রমণ হলেও তলপেটে ব্যথা হয়; এ ক্ষেত্রে প্রস্রাবে জ্বালাযন্ত্রণা হয়ে থাকে। জ্বরও থাকে। কখনো কখনো মূত্রাশয় বা মূত্রনালিতে পাথর হলে তলপেটে ব্যথা হয়। এ ক্ষেত্রে কোমরের দিক থেকে কুঁচকি পর্যন্ত ব্যথা ছড়ায়। এই দুই ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জরায়ু বা ডিম্বনালিতে জীবাণুর সংক্রমণ হলে তলপেটে ব্যথা, পিঠের নিচের দিকে ব্যথা, অস্বাভাবিক রঙের স্রাব কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হতে পারে। বৈবাহিক জীবনে অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে। জ্বরও হতে পারে। এসব সংক্রমণ পরবর্তী জীবনে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই চিকিৎসায় হেলা করবেন না।

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেও তলপেটে ব্যথা হতে পারে, তবে মলত্যাগের পর সাধারণত এ ব্যথা উপশম হয়ে যায়। প্রচুর শাকসবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। আবার আমাশয় বা পাতলা পায়খানা হলেও অনেক সময় তলপেট কামড়ে ধরার মতো ব্যথা হতে পারে।

তলপেটের ডানদিকে আকস্মিক তীব্র ব্যথা অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে, আবার মেয়েদের বেলায় অন্য কিছুও হতে পারে। যেমন ডিম্বাশয়ে সিস্টের জটিলতা, ডিম্ব নালিতে ভ্রূণ বেড়ে ওঠা বা ডিম্বাশয়ে রক্তপাত। এসব ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই হঠাৎ তীব্র পেটব্যথা শুরু হলে বিবাহিত-অবিবাহিত যেকোনো বয়সী নারীকেই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে।

ডা. রাফিয়া আলম
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০২:২৪; প্রথম আলো

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *